বাউফল প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর বাউফলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মেরামতকাজ ও কেনাকাটায় ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংখ্যা ও পুষ্টি সেক্টর কর্মসূচীর অধীনে পরিবার পরিকল্পনা ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারীর আওতায় ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অর্থ বরাদ্দ দেয়া হয়। বরাদ্দকৃত অর্থ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নিজের খেয়াল খুশি মত বিল ভাউচার তৈরি করে মোটা অংকের অর্থ আত্মসাত করেছেন।
২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে কাছিপাড়া ও ধুলিয়া পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে আসবাবপত্র মেরামত, রং ও বার্নিশ করার জন্য ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কোন কাজ না করেই ২০১৯ সালের ১৪ জুন আয়কর ও ভ্যাট বাদে বাকী ১৮,২০০ টাকা তুলে নেয়া হয়। একই বছর কায়না ও সাবুপুরা ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে আসবাবপত্র ক্রয়ের জন্য ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। নিয়মানুযায়ী ২৫ হাজার টাকার বেশী বরাদ্দকৃত অর্থ খরচ করতে হলে দরপত্র আহবান করতে হয়। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা কাগজে কলমে দরপত্র আহবান করলেও বাস্তবে ওই টাকা খরচ করার ক্ষেত্রে পুকুর চুরি হয়েছে। ওই দুটি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্রে কাঠের চেয়ার ক্রয়ের কথা থাকলেও প্লাস্টিকের তৈরি আসবাবপত্র সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া স্টিলের নি¤œমানের আলমীরা ও ফাইল কেবিনেট সরবরাহ করা হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের ৭৯ জন মাঠকর্মীর জন্য ছাতা ক্রয় করার ক্ষেত্রেও অর্থ লুটপাট করা হয়েছে। নি¤œমানের প্রতিটি ছাতা ৪০০ টাকা ক্রয় দেখানো হয়েছে। অথচ একই মানের ছাতা ২৫০ টাকায় বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
মাঠকর্মীদের জন্য ৭৬টি মেল ব্যাগের প্রতিটির দাম দেখানো হয়েছে ৮০০ টাকা। অথচ বাজারে এই মেল ব্যাগের সর্বোচ্চ দাম ৩৫০ টাকা। সিটিজেন চার্টার ও স্যাটেলাইট ক্লিনিকের জন্য সাইনবোর্ড তৈরির ক্ষেত্রেও পুকুর চুরি হয়েছে। ১০ সিটিজেন চার্টারের প্রতিটির মূল্য ২০০০ টাকা করে মোট ব্যয় দেখানো হয়েছে ২০ হাজার টাকা। অথচ প্রতিটি সিটিজেন চার্টার তৈরির খরচ হয়েছে ৫০০ টাকা। পুরানো ফ্রেমে সিটিজেন চার্টার স্থাপন করে হাতিয়ে নেয়া হয়েছে ওই টাকা। আর ১৫টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের ৬০টি সাইনবোর্ড তৈরি ও স্থাপনের জন্য নেয়া হয়েছে ৬০ হাজার টাকা। প্রতিটি সাইনবোর্ডের ব্যয় ১০০০ টাকা দেখানো হলেও বাস্তবে খরচ হয়েছে ৩৫০ টাকা।
এভাবে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা লুটপাট করা হয়েছে। ক্রয়ের ক্ষেত্রে দোকানের কোন পাকা মেমো নেই। কম্পিউটার কম্পোজ করে প্রতিটি ভাউচার তৈরি করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসের কয়েকজন মাঠকর্মী বলেন, উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা স্থানীয় আওয়ামীলীগের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। দলের প্রভাব খাটিয়ে তিনি যা ইচ্ছে তাই করছেন। তার ভয়ে কেউ অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে সাহস পাচ্ছেন না। অনিয়ম ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করে বাউফল উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, সরকারি নীতিমালার বাইরে কোন কিছুই করা হয়নি।
Leave a Reply